****শুভ অক্ষয়তৃতীয়া *<>*<>*শুভ চন্দন যাএা****
শ্রীপরশুরাম প্রভুর শুভ আবির্ভাব তিথি 'অক্ষয়তৃতীয়া' এবং চন্দন যাএা উৎসবের অগ্রীম কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
২৬/০৪/২০২০ ইং রোজ - রবিবার অক্ষয়তৃতীয়া এবং চন্দন যাএা উৎসব।দীর্ঘ ২১ দিন ব্যাপী শ্রীজগন্নাথদেবের নরেন্দ্রসরোবরে জলকেলী আর চন্দন যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
চন্দন যাত্রা ও অক্ষয়তৃতীয়ার মাহাত্ম্য"
উৎকলখণ্ডে বর্ণিত আছে, শ্রীজগন্নাথদেব মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নকে বৈশাখী শুক্লা অক্ষয় তৃতীয়াতে সুগন্ধি চন্দন দ্বারা জগন্নাথের অঙ্গে লেপন করতে নির্দ্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিন থেকে চন্দন যাত্রা উৎসব শুরু হল। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে দেখা যায়, বৃন্দাবনে পরম বৈষ্ণব শ্রীমাধবেন্দ্র পুরীকে স্বপ্নে তাঁর আরাধ্য শ্রীগোপাল বলছেন, "আমার শরীরের তাপ জুড়োচ্ছে না। মলয় প্রদেশ থেকে চন্দন নিয়ে এসো এবং তা ঘষে আমার অঙ্গে লেপন কর, তা হলে তাপ জুড়োবে।" তার পর বৃদ্ধ মাধবেন্দ্র পুরীপাদ পূর্বভারতে নীলাচলে জগন্নাথধাম পুরীতে এসে রাজার কাছে পূর্ব স্বপ্নগত সমস্ত কথা বললেন।
রাজা গোপালের জন্য এক মণ মলয়জ চন্দন, ২০ তুলা কর্পূর এবং এই চন্দন বহে নিয়ে আসার জন্য দুইজন সেবকের ব্যবস্থা করেদিলেন। মাধবেন্দ্র পুরীপাদ রাজার কাছে মলয়জ চন্দন ও কর্পূর নিয়ে বৃন্দাবনে ফিরছিলেন। পথে রেমুণাতে শ্রীগোপীনাথ মন্দিরে আসেন। সেই রাত্রে সেখানে শয়ন কালে স্বপ্ন দেখেন, গোপাল এসে বলছেন, "হে মাধবেন্দ্র পুরী, আমি ইতিমধ্যেই সমস্ত চন্দন ও কর্পূর গ্রহণ করেছি। এখন কর্পূর সহ এই চন্দন ঘষে ঘষে শ্রীগোপীনাথের অঙ্গে লেপন কর। গোপীনাথ ও আমি অভিন্ন। গোপীনাথের অঙ্গে চন্দন লাগালেই আমার অঙ্গ শীতল হবে।"
সকালে শ্রীমাধবেন্দ্র পুরিপাদ পূজারীর নিকট রাত্রের স্বপ্নের সমস্ত কথা বলিলেন। পূজারী প্রভু শুনে খুব খুশি হলেন এবং কর্পূর আর চন্দন ঘষে শ্রীগোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে লেপন করলেন। দীর্ঘ ২১ দিন ধরে এইভাবে প্রত্যহ পূজারী প্রভু গোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে লেপন করলেন। সেইদিন থেকেই চন্দন যাত্রা শুরু হল।
গ্রীষ্ম ঋতুতে শ্রীহরির অঙ্গে কর্পূর চন্দন লেপন করলে ভগবান শ্রীহরি প্রীত হন।
চন্দনযাত্রা মহোৎসব - এর ২১ দিন ব্যাপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরিধীত বেশ - এর নাম।।
১। নটবর বেশ
২। শ্রীকৃষ্ণজন্ম বেশ
৩। রাজাধিরাজ বেশ
৪। শ্রীবনবিহারী বেশ
৫। বৎসহরণ বেশ
৬। গোমতীকৃষ্ণ বেশ
৭। খট-দোলি বেশ
৮। চক্রনারায়ণ বেশ
৯। নৌকেলি বেশ
১০। নটবর বেশ
১১। শ্রীরাসমণ্ডল বেশ
১২। কন্দর্পরথ বেশ
১৩। অঘাসুর বধ বেশ
১৪। রঘুনাথ বেশ
১৫। শ্রীচৈতন্য বেশ
১৬। গিরিগোবর্ধন বেশ
১৭। গিরিধারী বেশ
১৮। বস্ত্রহরণ বেশ
১৯। চিন্তামনি কৃষ্ণ বেশ
২০। গজ উদ্ধারণ বেশ
২১। নৌবিহার
অক্ষয় তৃতীয়া কি এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ।
অক্ষয় তৃতীয়া হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া তিথি। অক্ষয় তৃতীয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি। অক্ষয় শব্দের অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। যদি ভালো কাজ করা হয় তার জন্যে আমাদের লাভ হয় অক্ষয় পূণ্য আর যদি খারাপ কাজ করা হয় তবে লাভ হয় অক্ষয় পাপ। আর এদিন পূজা, জপ, ধ্যান, দান, অপরের মনে আনন্দ দেওয়ার মত কাজ করা উচিত।যেহেতু এই তৃতীয়ার সব কাজ অক্ষয় থাকে, তাই প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সতর্কভাবে। এদিনটা ভালোভাবে কাটানোর অর্থ সাধনজগতের অনেকটা পথ একদিনে এগিয়ে যাওয়া।
অক্ষয় তৃতীয়া সম্পর্কে একটি পৌরাণিক গল্প দেওয়া হল :
একবার ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির মহামুনি শতানিককে অক্ষয় তৃতীয়া তিথির মাহাত্ম্য কীর্ত্তন করতে বললেন। শতানিক বললেন পুরাকালে খুব ক্রোধসর্বস্ব, নিষ্ঠুর এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। ধর্মকর্মে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিলনা। একদিন এক দরিদ্র ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণ তার নিকট অন্ন এবং জল ভিক্ষা চাইলেন। ব্রাহ্মণ কর্কশ স্বরে তাঁর দুয়ার থেকে ভিখারীকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেন আর বললেন যে অন্যত্র ভিক্ষার চেষ্টা করতে। ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর ভিখারী চলে যেতে উদ্যত হল। ব্রাহ্মণ পত্নী সুশীলা অতিথির অবমাননা দেখতে না পেরে স্বামীর নিকট উপস্থিত হয়ে ভরদুপুরে অতিথি সৎকার না হলে সংসারের অমঙ্গল হবে এবং গৃহের ধন সমৃদ্ধি লোপ পাবে, একথা জানালেন। স্বামীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ভিখারীকে তিনি ডাক দিলেন এবং ভিখারীর অন্যত্র যাবার প্রয়োজন নেই সে কথা জানালেন। সুশীলা খুব শীঘ্র তার জন্য অন্নজল আনবার ব্যবস্থা করলেন। কিছুক্ষণ পরেই তিনি অতিথি ভিক্ষুকের সামনে সুশীতল জল এবং অন্ন-ব্যঞ্জন নিয়ে খাবার জন্য দিলেন। দরিদ্র ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণ ভোজন করে অতীব সন্তুষ্ট হলেন এবং যাত্রার সময় সুশীলাকে আশীর্বাদ করে সেই অন্নজল দানকে অক্ষয় দান বলে অভিহিত করে চলে গেলেন।
বহুবছর পর সেই ব্রাহ্মণের অন্তিমকাল উপস্থিত হল। যমদূতেরা এসে তার ঘরে হাজির হলেন। ব্রাহ্মণের দেহপিঞ্জর ছেড়ে তার প্রাণবায়ু বের হ’ল বলে । তার শেষের সেই ভয়ঙ্কর সময় উপস্থিত হল। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় তার কন্ঠ ও তালু শুকিয়ে গেল। তার উপর যমদূতদের কঠোর অত্যাচার। ব্রাহ্মণ তাদের কাছে দুফোঁটা জল চাইল এবং তাকে সে যাত্রায় উদ্ধার করতে বলল। যমদূতেরা তখন বলল তুমি তোমার গৃহ থেকে অতিথি ভিখারীকে নির্জ্জলা বিদায় করেছিলে মনে নেই ?” বলতে বলতে তারা ব্রাহ্মণকে টানতে টানতে ধর্মরাজের কাছে নিয়ে গেল।
ধর্মরাজ ব্রাহ্মণের দিকে তাকিয়ে বললেন ''এঁকে কেন আমার কাছে এনেছ? ইনি মহা পুণ্যবান ব্যক্তি।বৈশাখমাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে এনার পত্নী তৃষ্ণার্ত অতিথিকে অন্নজল দান করেছেন । এই দানঅক্ষয় দান। সেই পুণ্যে ইনি পুণ্যাত্মা। আর সেই পুণ্যফলে এনার নরক গমন হবেনা । ব্রাহ্মণকে তোমরা জল দাও। শীঘ্রই ইনি স্বর্গে গমন করবেন !!
এদিন যেসকল তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল-
১) এদিনই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম জন্ম নেন পৃথিবীতে।
২) এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।
৩) এদিনই প্রথমপূজ্য গণপতি গণেশ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী শুনে মহাভারত রচনা শুরু করেন।
৪) এদিনই দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে।
৫) এদিনই সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়।
৬) এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
৭) এদিনই ভক্তরাজ সুদামা শ্রীকৃষ্ণের সাথে দ্বারকায় গিয়ে দেখা করেন এবং তাঁর থেকে সামান্য তন্দুল খেয়ে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সকল দুঃখ মোচন করেন।
৮) এদিনই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে যান এবং কোটিবস্ত্র দান করে শ্রীকৃষ্ণ দ্রোপদীর লজ্জা নিবারণ করেন।
৯) এদিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ নির্মাণ কার্য্য শুরু হয়।
১০) কেদার, বদ্রি, গঙ্গোত্রী ও যমুনত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে, এই দিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।
১১) এদিনই সত্যযুগের শেষ হয়ে প্রতি কল্পে ত্রেতা যুগ শুরু হয়।
জয় পরশুরাম ভগবানের জয়। জয় শ্রীজগন্নাথদেবের চন্দন যাত্রার জয়।।
1 Comments
Jay Jagannath
ReplyDelete