অক্ষয় তৃতীয়া কথাটির অর্থ এবং অক্ষয় তৃতীয়া কথাটির মাহাত্ম্য কি?


 #অক্ষয় তৃতীয়ার কথাটির অর্থ এবং অক্ষয় তৃতীয়ার কথাটির মাহাত্ম্য  কি?_#শুভ অক্ষয়তৃতীয়া


আজ শুভ অক্ষয় তৃতীয়ায় সমস্ত গৌড় ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে কোটি কোটি দন্ডবৎ প্রণাম নিবেদন করছি কৃপা করে গ্রহণ করুন।আশীর্বাদ করবেন যেন গুরু গৌরাঙ্গের সেবা করতে পারি ‌।


বৈশাখ মাসের মাহাত্ম্য অনেক তার মধ্যে অন্যতম এটি

 অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য 

১) এই দিনেই সত্যযুগের শেষে ত্রেতাযুগের
     সুচনা হয়।
২) ভগবান পশুরামের আবির্ভাব।
৩) গঙ্গা দেবীর র্মত্যলোকে আগমন।
৪) মহাভারতের রচনা শুরু।
৫) ভগবানের যজ্ঞের শস্য যবের উৎপত্তি হয়
৬) ভগবান নরনারায়ণ হয়গ্রিপের আবির্ভাব।
৭) মা অন্নর্পূনা দেবীর আবির্ভাব।
৮) কুবেরের বৈভব লক্ষ্মী লাভ।
৯) দ্রৌপদীর অক্ষয় পাত্র লাভ।
১০)দ্বাদশ গরুড়দেবের সেবা।
১১)কৃষ্ণ সুদামা মিলন।
১২) রাজ্যসভায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরন।
১৩)রামচন্দ্রের রাজ্যাভিষেক।
১৪)ব্রহ্মার পুত্র অক্ষয় কুমরের জন্ম।
১৫)কেদ্রার বদ্রীকাশ্রমের দ্বার খোলে।
১৬)সীমাচলমে জিয়ুর নৃসিংহদেবের দর্শন।
১৭)পবন চন্দন যাত্রাশুরু।
১৮)শংকরার্চায্যের কল কাধার নামক -                 
       বিখ্যাত শ্লোক রচনা করেছিলেন।
১৯)ঋষি জমদগ্নির বধ হয়েছিল।
২০)বাকী বিহারীর চরণ দর্শন।
২১)ভগবান জগন্নাথদেবের চন্দন যাত্রা।
২২)মাধবেন্দ্রপুরীপাদের গোপিনাথের অঙ্গে
      চন্দন লেপন।
২৩)জগন্নাথের রথের নির্মান কাজ শুরু করে ।

আজ  হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি।গৌরাব্দ 534, বঙ্গাব্দ  13বৈশাখ 1427, খ্রিষ্টাব্দ 26 এপ্রিল 2020, রবিবার।আজ অক্ষয় তৃতীয়া । অক্ষয় তৃতীয়া একটি  বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি। অক্ষয় শব্দের অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে।

যদি ভালো কাজ করা হয় তার জন্যে আমাদের লাভ হয় অক্ষয় পূণ্য আর যদি খারাপ কাজ করা হয় তবে লাভ হয় অক্ষয় পাপ। তাই এদিন খুব সাবধানে প্রতিটি কাজ করা উচিত। খেয়াল রাখতে হয় ভুলেও যেন কোনো খারাপ কাজ না হয়ে যায়। কখনো যেন কটু কথা না বেরোয় মুখ থেকে। কোনো কারণে যেন কারো ক্ষতি না করে ফেলি বা কারো মনে আঘাত দিয়ে না ফেলি। তাই এদিন যথাসম্ভব মৌন থাকা জরুরী। আর এদিন পূজা,জপ,ধ্যান,দান,অপরের মনে আনন্দ দেয়ার মত কাজ করা উচিত। যেহেতু এই তৃতীয়ার সব কাজ অক্ষয় থাকে তাই প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সতর্কভাবে। এদিনটা ভালোভাবে কাটানোর অর্থ সাধনজগতের অনেকটা পথ একদিনে চলে ফেলা। এবারের অক্ষয়তৃতীয়া সবার ভালো কাটুক – এই কামনায় করি।

🔸অক্ষয় তৃতীয়া সম্পর্কে একটি পুরানিক ব্যাখ্যা 🔸

ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির একবার মহামুনি শতানিককে অক্ষয় তৃতীয়া তিথির মাহাত্ম্য কীর্তন করতে বললেন ।
শতানিক বললেন পুরাকালে খুব ক্রোধসর্বস্ব , নিষ্ঠুর এক ব্রাহ্মণ ছিলেন । ধর্মকর্মে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিলনা । একদিন এক দরিদ্র ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণ তার নিকট অন্ন এবং জল ভিক্ষা চাইলেন । রণচন্ডী হয়ে ব্রাহ্মণ কর্কশ স্বরে তাঁর দুয়ার থেকে ভিখারীকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেন আর বললেন যে অন্যত্র ভিক্ষার চেষ্টা করতে ।

ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর ভিখারী চলে যেতে উদ্যত হল ।

ব্রাহ্মণ পত্নী সুশীলা অতিথির অবমাননা দেখতে না পেরে দ্রুত স্বামীর নিকট উপস্থিত হয়ে ভরদুপুরে অতিথি সত্কার না হলে সংসারের অমঙ্গল হবে এবং গৃহের ধন সমৃদ্ধি লোপ পাবে … একথা জানালেন ।
স্বামীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ভিখারীকে তিনি ডাক দিলেন এবং ভিখারীর অন্যত্র যাবার প্রয়োজন নেই সে কথা জানালেন । সুশীলা ত্রস্তপদে তার জন্য অন্নজল আনবার ব্যবস্থা করলেন । কিছুপরেই তিনি অতিথি ভিক্ষুকের সামনে সুশীতল জল এবং অন্ন-ব্যঞ্জন নিয়ে হাজির হলেন । ভিখারী বামুন অতীব সন্তুষ্ট হলেন এবং সে যাত্রায় সুশীলাকে আশীর্বাদ করে সেই অন্নজল দানকে অক্ষয় দান বলে অভিহিত করে চলে গেলেন ।
বহুবছর পর সেই উগ্রচন্ড ব্রাহ্মণের অন্তিমকাল উপস্থিত হল । যমদূতেরা এসে তার শিয়রে হাজির । ব্রাহ্মণের দেহপিঞ্জর ছেড়ে তার প্রাণবায়ু বের হ’ল বলে । তার শেষের সেই ভয়ঙ্কর সময় উপস্থিত । ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় তার কন্ঠ ও তালু শুকিয়ে গেল । তার ওপর যমদূতেদের কঠোর অত্যাচার । ব্রাহ্মণ তাদের কাছে দুফোঁটা জল চাইল এবং তাকে সে যাত্রায় উদ্ধার করতে বলল ।
যমদূতেরা তখন একহাত নিল ব্রাহ্মণের ওপর ।
তারা বলল ” মনে নেই ? তুমি তোমার গৃহ থেকে অতিথি ভিখারীকে নির্জ্জলা বিদেয় করেছিলে ?”
বলতে বলতে তারা ব্রাহ্মণকে টানতে টানতে ধর্মরাজের কাছে নিয়ে গেল ।

ধর্মরাজ ব্রাহ্মণের দিকে তাকিয়ে বললেন ” এঁকে কেন আমার কাছে এনেছ্? ইনি মহা পুণ্যবান ব্যক্তি ।বৈশাখমাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে এনার পত্নী তৃষ্ণার্ত অতিথিকে অন্নজল দান করেছেন । এই দানঅক্ষয় দান ।
সেই পুণ্যে ইনি পুণ্যাত্মা । আর সেই পুণ্যফলে এনার নরক গমন হবেনা । ব্রাহ্মণকে তোমরা জল দাও । এনার প্রাণবায়ু নির্গত হতে দাও । শীঘ্রই ইনি স্বর্গে গমন করবেন ”

Post a Comment

0 Comments